সাইকেলে চড়ে সর্বনাশা পদ্মা নদী পাড়ি দিলেন যেভাবে
https://www.latestbdnews.com/the-strange-matter-by-saiful/
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। যা কখনো ভাবা হয়নি এমনটি করে দেখিয়েছেন সাইফুল। তিনি সাইকেল চালিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে তাক লাগিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন চেষ্টা করলে কঠিন কাজটিও সহজেই করা যায়। সাইফুলের এই পদ্মা পাড়ি দেয়ার দৃশ্য দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান সর্বনাশা পদ্মা নদীর পাড়ে। সাইকেলটি বিশেষ কায়দায় তৈরি করেন সাইফুল নিজেই। তার ভাষ্য দীর্ঘ প্রচেষ্টা শেষে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
জানা গেছে, সাইফুলের বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। তিনি একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৌর শক্তি আলোর সালথা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক।
জানা যায়, সদর উপজেলার ধলা মোড় এলাকায় পদ্মা নদীর একটি ক্যানেলে গত ২৮ মে বেলা ১১টার দিকে সাইফুল ইসলামকে সাইকেলটি চালাতে দেখা যায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক তিনি সাইকেল চালান। ২০০ মিটার ক্যানেল অতিক্রম করেন তিনি।
এ সময় তাকে দেখতে নদীর পাড়ে অনেক মানুষ ভিড় করেন। সাইকেল চালিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে স্থলপথে বাড়ি ফিরেন সাইফুল। তার অনেক দিনের স্বপ্ন আর সাধনার প্রশংসা করেন এলাকাবাসী। তারা জানান, সাইফুল একজন খুবই পরিশ্রমী মানুষ।
স্থানীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হাসিবুল হাসান বলেন, সাইফুলের উদ্ভাবনটি বেশ সাড়া ফেলেছে। তবে বাহনটিকে আরও জনপ্রিয় করতে এটির ওজন আরও কমিয়ে আনতে হবে। নির্মাণব্যয় সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এ সাইকেল বেশ কাজে লাগবে।
সাইফুল দীর্ঘ ছয় মাস চেষ্টা চালিয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ সাইকেলটি তৈরি করেন। এটি জল-স্থলে চলতে পারে। বলা যায়, উভচরে চলে সাইফুলের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সাইকেল। ওই সাইকেল তিনি এলাকায় চালিয়ে প্রাক্টিস করতে থাকেন। এরই মধ্যে তার স্বপ্নের ডানা মেলে যায়। ভাবতে থাকেন আমি পদ্মা নদী পাড়ি দেব। অবশেষে তাই সত্যি হলো।
কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অনেক। এই কাজ করতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন তার সামর্থ্য নেই সাইফুলের। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে জানান সাইফুল।
তার তৈরি সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। দুই চাকার দুই পাশে চারটি গোলাকার টিউব। টিউবের সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডেল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌরবিদ্যুতে চলে। শুধু পানিতে নয়, স্থলপথেও সাইকেলটি চালানো যায়। তখন টিউব চারটি চাকার দুই পাশে আটকে রাখা হয়।
সাইফুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। পরের বছর ‘শক্তি সৌর আলো’তে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাটখড়ি, কাচ, কাগজ দিয়ে তিন হাত লম্বা ও এক হাত চওড়া একটি বাস তৈরি করেছিলাম।
তিনি বলেন, সাইকেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। সময় লেগেছে ছয় মাস। বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌরচালিত স্পিডবোট বানানোর চেষ্টা করছি। যা জলের পাশাপাশি ডাঙায়ও চলবে। এমন একটি সাইকেল বানাতে চাই, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে। এছাড়া এমন এক জোড়া জুতা তৈরি করতে চাই, যা দিয়ে অনায়াসে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, স্বপ্নপূরণের পথে বাধাও অনেক। এই কাজে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সামর্থ্য তেমন নেই। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। তবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানি না।
এতেও সাইফুল ইসলাম সন্তুষ্টি নন। তিনি আরো ভালো কিছু করতে চান। তিনি জানালেন, আমার স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ করতে এখনো সময় বাকী। আমি চাই আমার এই সাইকেলকে আরও আধুনিকায়ন করতে। তিনি স্বপ্ন দেখেন ভিন্ন কিছু।
যে স্বপ্ন পূরণে লাগবে গবেষণা। লাগবে অনেক অর্থ। এমন একটি সাইকেল তৈরি করে আমি আকাশে উড়ব। ওই সাইকেল দিয়ে মনের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে চলব মনের আনন্দে।