সাগরে সৌরবিদ্যুৎ চাষ
https://www.kalerkantho.com/print-edition/techbishwa/2019/03/02/742646
নরওয়ে তৈরি করেছে ভাসমান সৌরদ্বীপ। ফুটবল মাঠের সমান এই বিশাল দ্বীপগুলো সমুদ্রে ভেসে ভেসে সূর্যের রশ্মি কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। বিস্তারিত মিজানুর রহমান
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনেক জায়গা যেমন লাগে, তেমনি বেশ বড়সড় বিনিয়োগও প্রয়োজন। তবে সৌরবিদ্যুতের এ দুটি সমস্যা একবারে সমাধান করতে পেরেছে বলে দাবি করছে নরওয়ের সৌরবিদ্যুৎ কম্পানি ‘ওশান সান’।
তারা মনে করে, ভূমির ব্যবহার উপযোগী জায়গাকে সোলার প্যানেল দিয়ে না ঢেকে দিয়ে সমুদ্রের পানির ওপর ভাসমান সোলার প্যানেলেই বরং লাভ বেশি। ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে আগে অনেক কাজ হলেও ওশান সানের প্রক্রিয়াটি ভিন্ন ও ‘স্কেলেবল’ (আকার বড় করা যায়)। নরওয়েতে তারা কয়েকটি পরীক্ষামূলক ফার্ম চালাচ্ছে এখন।
খরচ ও স্থানপ্রাপ্তির ঝক্কি তুলনামূলক কম হওয়ায় বিশ্বের অনেক বড় কম্পানি ওশান সানের এই পক্রিয়াকে খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকেরই ধারণা, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে এমন ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র ভবিষ্যতে উপকূল অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে।
ঢেউ ও নোনার বাধা অতিক্রম
সমুদ্রের ওপর ভাসমান সোলার প্যানেল স্থাপন করার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল—প্যানেলগুলোকে ঢেউয়ের আঘাত থেকে নিরাপদ ও নোনা পানি থেকে রক্ষা করা। আর এই সমস্যা সমাধান করতে কম্পানিটি হাইড্রো-ইলাস্টিক মেমব্রেন ব্যবহার করেছে। এ ধরনের মেমব্রেন একদিকে যেমন শক্ত-সামর্থ্য, তেমনি সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। ফলে সোলার প্যানেলগুলো পর্দাটির ওপর রেখে দেওয়া যায়। আর পুরো সাইটকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখা হয়। ফলে নোনা পানি ভেতরে ঢুকতে পারে না।
আদর্শ স্থান
প্রাথমিকভাবে মাছ ধরার জায়গাগুলোকে এ ধরনের সোলার প্যানেল বসানোর জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাধারণত সমুদ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের স্থানে ভাসমান সোলার প্যানেল বসালে সেসব মাছের ফার্ম থেকে বাড়তি আয় করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী উপকূল বা উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে। ফলে উপকূলের দিগন্তবিস্তৃত খোলা জলরাশির বুকে এ ধরনের ভাসমান সৌরশক্তি প্রকল্প একটি নগরের শক্তির ব্যবহারকে বিকেন্দ্রীকরণে বড় ধরনের সহায়তা করবে।
সুবিধা আছে অনেক
ভাসমান সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে প্রক্রিয়াটি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ অনেক কমে আসবে। সমুদ্রে বস্তুত স্থানের কোনো অভাব নেই। তাই যেকোনো আকারের সোলার ফার্ম সেখানে স্থাপন করা যেতে পারে। অন্যদিকে সমুদ্রে ভাসমান সোলার ফার্মগুলো ভূমির ফার্মগুলোর চেয়ে বেশি সূর্যালোক পাবে। কারণ এখানে আলোকে বাধা দেওয়ার মতো কিছু নেই। আর সে কারণে এসব সোলার ফার্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনও মোটামুটি বেশি হতে পারে, ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।