খরচ বাঁচাতে সোলার কুকার নিয়ে সচেতনতা অধ্যাপকের – MICRO SOLAR ENERGY
Responsive image
Article

খরচ বাঁচাতে সোলার কুকার নিয়ে সচেতনতা অধ্যাপকের

খরচ-বাঁচাতে-সোলার-কুকার-ন

https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/solar-cooker/articleshow/51087787.cms

অতসী ধর

 

ফ্ল্যাটের চারটি ঘরের মধ্যে তিনটিতে সৌরচালিত পাখা ও আলো৷ গত বছরের জুনে প্রচণ্ড গরমেও ফ্ল্যাটের মাসিক ইলেকট্রিক বিল উঠেছিল ২৫০ টাকা !শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা , নদিয়ার বগুলায় শ্রীকৃষ্ণ কলেজের অধ্যাপক সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে গেলেই বোঝা যাবে , তিনি সৌর বিদ্যুতের উপর কতখানি নির্ভরশীল৷ রান্নাঘরেও নীরবে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি৷ তিন রকমের সোলার কুকারে রান্না হয় তাঁর৷ গ্যাসে রান্না হয় শুধু মাস তিনেক , বর্ষার সময়৷ আর ঘটনা হল , সোলার কুকারগুলো সব তাঁর নিজেরই তৈরি৷ আরও মজার কথা , সত্যপ্রিয় কিন্ত্ত বিজ্ঞানের অধ্যাপক নন , বাংলার অধ্যাপক ! শক্তির ভূগর্ভস্থ উত্সের বিপন্নতার কথা মাথায় রেখে অচিরাচরিত শক্তির উত্সকে বেশি করে কাজে লাগানোর দিকে ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ অচিরাচরিত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি নিয়ে আলাদা দন্তরও রয়েছে৷ সৌরশক্তি নিয়ে সত্যপ্রিয়র উত্সাহ কিন্ত্ত তার ঢের আগেই৷ বছর কুড়ি আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে সোলার কুকার , সোলার গিজার , সোলার আলো সম্পর্কে জানতে পারেন সত্যপ্রিয়৷ লিখেও ফেলেন একটি বই — সোলার কুকারে রান্না৷ এ বইয়ের উল্লেখও রয়েছে আমেরিকার ‘সোলার কুকার ইন্টারন্যাশনালস ’ জার্নালে৷

শুধু সোলার কুকারই কেন ? সত্যপ্রিয় বলছেন , রান্নার গ্যাস বা কেরোসিন তেলে প্রভূত খরচ হয় ভোজনরসিক বাঙালির৷ অথচ , খরচ অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও সোলার কুকারের ব্যবহার নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই৷ তাঁর কথায় , ‘তখন থেকে আমি সোলার কুকার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি৷ এই কুকারের ব্যবহার বাড়লে আর্থিক সাশ্রয় তো হবেই , শক্তির সঞ্চয়ও বাড়বে৷ সোলার কুকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন , তাঁদের কাছে গিয়ে সত্যপ্রিয় দেখেন , কী ভাবে সেলোফেন পেপার আর পিচ বোর্ড ব্যবহার করে মাত্র দুশো – আড়াইশো টাকা খরচ করে সোলার কুকার তৈরি করা যায়৷এখান থেকেই শুরু হয় সোলার কুকার নিয়ে সত্যপ্রিয়র সচেতনতার দৌড়৷ নিজের হাতেই বানিয়ে ফেলেন একটা সোলার কুকার৷ ওই কুকার নিজের ছাদে বসিয়ে রান্না করে প্রতিবেশীদের খাওয়ানও তিনি৷ তাঁর এক পরিচিত সরকারি কর্মী যশোধরা রায়চৌধুরী জানান , ‘সত্যর বাড়িতে এক রবিবারে সোলার কুকারে তৈরি রান্না খেয়ে অভিভূত হয়ে যাই৷ নিজেও একটি সোলার কুকার কিনে ফেলি৷ তিন বছর ব্যবহার করছি৷’

 

পর্বতারোহী পার্থসারথি দত্ত বলেন , ‘সেলোফেন আর পিচ বোর্ডে তৈরি সোলার কুকার ভাঁজ করে বহন করা সহজ৷ যেখানে -সেখানে রান্নাও করা যায়৷’ ফরাসির অধ্যাপক দেব চৌধুরীও সত্যপ্রিয়র কাছ থেকে সোলার কুকার সম্পর্কে জেনে এখন তা ব্যবহার করছেন৷ সত্যপ্রিয়র প্রতিবেশী সুন্তি রায়ও তাঁর দেখাদেখি ঘরে সৌর আলো লাগিয়েছেন৷ সোলার কুকারও কিনেছেন৷ তা ছাড়াও , প্রায়ই নানা জন সত্যপ্রিয়কে ফোন করেন সোলার কুকারের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান৷ এখানেই শেষ নয়৷ ২০০৭ সালে কাঠমান্ডুতে সোলার কুকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন সত্যপ্রিয়৷প্রতি সপ্তাহে নিজের বাড়িতে সোলার কুকারে রান্না করে খাওয়ান পাড়ার একটি বা দু’টি পরিবারকে৷ ঘরের সোলার কুকার বয়ে নিয়ে গিয়ে নদিয়ায় নিজের কলেজেও দু’বার প্রচার করেছেন৷

 

তাঁর উত্সাহ দেখে ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত নিজে একবার গল্ফ গ্রিনের সেন্ট্রাল পার্কে সোলার কুকার নিয়ে প্রচার করার ব্যবস্থা করে দেন৷ তপনবাবু বলছেন , ‘সত্যপ্রিয়বাবু সোলার কুকার নিয়ে অনেক কিছু জানেন৷ তাই সেন্ট্রাল পার্কে সোলার কুকার নিয়ে মানুষজনকে সচেতন করার ব্যবস্থা করে দিই৷ ’ আর্মি টেরিটোরিয়াল গ্রাউন্ডে সেনা ছাউনিতেও সোলার কুকারের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ডাক পড়েছিল সত্যপ্রিয়র৷ তাঁর কথায় , ‘কোনও মিশন বা অপারেশনে গেলে সেনাবাহিনীকে জলে -জঙ্গলে খোলা জায়গায় থাকতে হয়৷ আগুন জ্বালিয়ে রান্না করলে যে ধোঁয়া বের হয় , সেখান থেকেই ধরা পড়ে যেতে পারে ফৌজের অবস্থান৷ সে ক্ষেত্রে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম , তারকেশ্বর দাস ফাউন্ডেশনে গিয়েও তিনি এবিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন৷ সেই সোলার কুকার দেখাচ্ছেন সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায় — এই সময়৷