বিশ্বে জ্বালানি শক্তির রূপরেখা বদলে দিচ্ছে চীন
http://bonikbarta.net/bangla/news/2019-02-06/186577/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%82%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A7%80%E0%A6%A8/
পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীনের সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। দেশটিতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৩০ গিগাওয়াট। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্পটিও দূরপ্রাচ্যের এ দেশটিতে অবস্থিত। চীনের টেনযার্ট মরুভূমির এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০০ মেগাওয়াট।
বাজার গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গ নিউ এনার্জি ফাইন্যাকে দেশটির লেসলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়েভোন লিউ বলেন, চীন বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক। এখানকার বাজার সত্যিই অনেক বড়। এটি সরকারের জন্য শিল্প নীতির মত।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ সৌর প্যানেল চীনে তৈরি হয়। সৌর প্যনেলে উচ্চ চাহিদা সম্পর্কে সরকারের সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক আগ্রহ রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত চীনের দুই তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের চাহিদা কয়লা শক্তি থেকে আসে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
আইইএ আরো জানিয়েছে, দেশটি তাদের নিজেস্ব সময়সীমা ২০২০ সাল থাকলেও তিন বছর আগেই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এসব সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো চীনের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমতল ভূমিতে গড়ে উঠছে।
তবে এত নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরও কেনো দেশটির দুই তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের চাহিদা কয়লা তা একটু ভাবনার বিষয়। এই বিষয়ে অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউয়ান ঝু, হংকংয়ে চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে বলেন, এসব সোলার প্যানেলগুলো বড় বড় শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। ফলে সেখানে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা বড় শহরের তুলনায় অনেক কম। বড় শহরগুলোতে তাই কম সক্ষমতা সম্পন্ন উৎপাদন ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে এবং যার ফলশ্রুতিতে চাহিদা মেটাতে যেকোনো উৎস হতেই বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ইউয়ান ঝু হংকংয়ে চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চায়নার বৈদ্যুতিক পরষিদের একটি তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের প্রথম ৬ মাসে চীনের সৌর বিদ্যুৎ সরঞ্জামের ধারনক্ষমতা ছিল মাত্র ১৪.৭ শতাংশ। যদিও চীনের সোলার প্লান্টের উৎপাদন সক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট বলা হয়েছিল কিন্তু প্রতিদিন গড়ে মাত্র তার ৬ শতাংশই ব্যবহার হয়ে থাকে।
চীন বর্তমানে এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। নতুন এবং উন্নত ট্রান্সমিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলে দেশটির স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জেফ্রি বল জানিয়েছেন। তবে এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এতো দ্রুত হওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
লিউ জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব নবায়নযোগ্য শক্তির তহবিল ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকার এর পিছনে ভর্তুকি দিতেও অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। গত বছর চীনে সোলার সক্ষমতা বসানো হয় ৫৩ গিগাওয়াট কিন্তু এ বছর এই সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে ৩৫ গিগাওয়াটে নেমে আসবে।
একইসঙ্গে জেফ্রি বল মনে করেন, এই সমস্যা চীনকে অতি দ্রুত মোকাবিলা করতে হবে। সস্তা সোলার প্যানেল, ভর্তুকি মওকুফ বা কমানোর মাধ্যমে আগামিতে নতুন আরো অনেক নতুন ও বড় প্রকল্প তৈরির মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। যা বিশ্বেও এর প্রভাব ফেলবে এবং এই নতুন উৎস বিশ্বের শক্তির উৎসকে রুপান্তরিত করতে পারে।